বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
১৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচারকরা সরকারের কাছে জিম্মি: শিশির মনির

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ২৩, ২০২৫

১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচারকরা সরকারের কাছে জিম্মি: শিশির মনির
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারকরা সরকারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেছেন, এই অনুচ্ছেদের অধীনে বিচারকদের পদোন্নতি, কর্মস্থল নির্ধারণ ও ছুটি মঞ্জুরির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে, যা বিচারকদের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে শিশির মনির বলেন, ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচারকরা কখনোই স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, বরং তারা সরকারের চাপের মুখে থাকে। এমনকি সরকারের পছন্দ অনুযায়ী আদেশ না দেওয়ার কারণে কিছু বিচারককে বদলি করা হয়েছে। তাদের নতুন কর্মস্থলে পাঠানোর সময় তারা চোখের পানি ফেলতে দেখা গেছে।

তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘একটি ঘটনা ছিল, যেখানে বিচারককে রাতের বেলা আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। সরকারের পছন্দমতো আদেশ না দেওয়ার কারণে বিচারককে বান্দরবানে বদলি করা হয়।’

শিশির মনির জানান, ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের প্রক্রিয়া থেমে গেছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই অনুচ্ছেদ বাতিল হলে বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ মিলবে এবং বিচারের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হবে না।

এছাড়া, ১১৬ অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকদের ওপর সরকারের প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।

হাইকোর্ট গত ২৭ অক্টোবর একটি রুল জারি করেছিল, যাতে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক হবে না। এই রুলের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, রিট আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী, যারা এই রুল জারির জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। আইনজীবীরা বলেছেন, ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এতে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বাস্তবায়ন আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত থাকে।

রিট আবেদনে বলা হয়, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করা আবশ্যক। যদি এটি বাতিল করা হয়, তবে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং বিচারের স্বাধীনতা পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।’


এছাড়া, রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, যে ২০১৭ সালে প্রণীত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (ডিসিপ্লিনারি) রুলস-এর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আবেদনকারীরা দাবি করেছেন— এই রুলসের মাধ্যমে বিচারকদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছেন না।


এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করা এবং ২০১২ সালের সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।

রিট আবেদনকারীরা বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশ। তবে, ১১৬ অনুচ্ছেদ কার্যকর থাকার কারণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে, কারণ রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণের কারণে বিচারকদের স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।


তারা আরও বলেছেন, ১১৬ অনুচ্ছেদে শৃঙ্খলাবিধি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত থাকায় বিচারকরা সরকারের হস্তক্ষেপে পড়ছেন। এতে তাদের বিচারিক স্বাধীনতা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং তাদের পক্ষে সঠিকভাবে বিচার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

রিট আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে। আবেদনে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের নির্দেশনা এবং ২০১২ সালের আদেশ অনুযায়ী অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্যও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।


এছাড়া, বিচারকদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ কমানোর জন্য এই রিট আবেদন করা হয়েছে।
0 Comments